বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
করোনা পরিস্থিতিতে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। শুক্রবার মমতা বলেন, ‘করোনা চললেও আমাদের এই সঙ্কটের মধ্যেই কাজ করতে হবে। করোনা নিয়েই ঘুমোতে হবে। তাই করোনাকে পাশবালিশ করে নিন।’ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এই কথায় রীতিমতো জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রী করোনার বিরুদ্ধে হার স্বীকার করে নিলেন?
উল্লেখ্য, এদিনই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে দেখা যাচ্ছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৭ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮১৩ জনে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। ফলে রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩০ জনে। এ ছাড়া কো–মর্বিডিটিতে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। ফলে করোনায় রাজ্যে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩০২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে কলকাতার রয়েছে ১ হাজার ৯৭৩ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। ফলে কলকাতায় করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৪। স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত কলকাতা পুরসভাও।
প্রাক্তন মেয়র তথা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের কথায়ও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের অনুরণন শোনা যায়। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে করোনা বাড়ছে। শহরেও করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তবুও পুরসভা মাইক্রো প্ল্যানিং করে সংক্রমণ রোধের কাজ করছে। তিনি জানান, এখন যে পরিস্থিতি কলকাতায় রয়েছে, তাতে দীর্ঘদিন লকডাউন চালিয়ে যাওয়া যায় না। আমাদের করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। আবার মানুষকে পরিষেবাও দিতে হবে। সেইজন্য শহরকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করা হচ্ছে। একদিকে যেমন স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া হবে, তেমনই করোনা মোকাবিলার কাজও পুরসভা চালিয়ে যাবে বলে জানান ফিরহাদ।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে বলে ধারণা অনেক বিশেষজ্ঞেরই। তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন, করোনা সহজে পৃথিবী ছেড়ে যাবে না। সেইজন্য ঘরে বসে থাকলে আমাদের চলবে না। নিজে সাবধান থেকেই আমাদের সব কাজ করে যেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘আমার পাড়ায় যান। দেখে আসুন কতজনের করোনা হয়েছে! আমি তো প্রায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছি।’
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ এবং তাঁর পরিবারের দু’জনের করোনা ধরা পড়েছে, এ ছাড়া সেখানে কর্তব্যরত কয়েকজন পুলিশকর্মীরও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।’ তিনি এদিন আরও বলেন, ‘সকলেরই সতর্ক থেকে কাজ করা উচিত। এ কথা আমি সবাইকেই বলি। ববি–সুজিতকেও বলেছিলাম। সবাই যদি ঘরে বসে থাকে, তা হলে কাজ হবে কী করে?’
প্রসঙ্গত, মন্ত্রী সুজিত বসুও করোনা সংক্রমিত বলে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। রিপোর্টে তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পজিটিভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বাড়িতেই আইসোলেশনে রয়েছেন। তাঁর বাড়িতে প্রথমে দুই পরিচারিকার শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার পরই সুজিতবাবুর স্ত্রীও করোনা সংক্রমিত হন। তিনি এখন সুস্থ। তবে এবার সুজিত বসু করোনায় আক্রান্ত হলেন। এখন মন্ত্রীর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি সম্পূর্ণ কর্মী নিয়ে কাজ করতে পারবে বলে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, ১ জুন থেকে ১০০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে চা–বাগান এবং জুটমিল খুলে যাবে। ৮ জুন থেকে খুলবে সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সমস্ত সংস্থাই ১০০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করতে পারবে। মন্দির, মসজিদ এবং গির্জাও ১ জুন থেকে খুলে যাবে। তবে সেগুলিতে ভিতরে ১০ জনের বেশি ঢোকা যাবে না। বাস পরিষেবার ক্ষেত্রেও নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি জানান, আগে বাসে সর্বাধিক ২০ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া যেত। এবার যতগুলি সিট রয়েছে, ততজনকেই বাসে নিয়ে যাওয়া যাবে। তবে বাসে কেউ দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন না। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এই নির্দেশও দিয়েছেন, বাসে সকলকে গ্লাভস ও মাস্ক পরে উঠতে হবে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে সিপিএম। দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী এদিন টুইট করে লেখেন, ‘১ জুন থেকে ধর্মীয় স্থানগুলি খুলে যাচ্ছে। আর ৮ জুন থেকে তো সব কিছুই খুলে যাচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘খুলতে তো অবশ্যই হবে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যখন ব্যাপক আকার নিচ্ছে, তখন সাধারণ মানুষকে কেন গিনিপিগ করা হচ্ছে?’ তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ‘ও–সব খোলার আগে নেতা–মন্ত্রীদের বিধানসভা খোলা উচিত ছিল মুখ্যমন্ত্রীর।’